সাম্রাজ্যবাদের সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞায়ন (A Brief Definition of Imperialism)


theoryTagS

 

English version: http://koleksyon-inip.org/a-brief-definition-of-imperialism/

Original translation: http://www.mongoldhoni.net/brief-defination-of-imperialism/

পুঁজিবাদের ঐতিহাসিক সম্প্রসারণ অপ্রতিরোধ্যভাবে (সমরূপে নয় যদিও) পুঁজির কেন্দ্রীভবনের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি, একচেটিয়া বাজার দখল ও প্রযুক্তির বিকাশ এই সস্প্রসারণকে করেছে আরও ত্বরান্বিত। পুঁজির কেন্দ্রীভবন তৈরি করেছে একচেটিয়া আধিপত্যের; যা তাদের শাসনকৃত অধীনস্থ সমাজ কাঠামোর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর সমানুপাতে (নিয়ন্ত্রণ করে) ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাতে সাহায্য করছে।

যখন পুঁজির নিয়ম অনুযায়ী অপরিহার্য বিকাশের পরিণতি স্বরূপ, প্রত্যাশিতভাবেই তার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় (জনগোষ্ঠী বা সামাজিক কাঠামোতে) পুঞ্জীভূত উদ্বৃত্তমূল্য সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে, তখন পুঁজি বাধ্য হয়েই নিজ বিকাশের স্বার্থে ঐ এলাকার গণ্ডি পেড়িয়ে অন্য এলাকার দিকে আগ্রাসী হয়। রাষ্ট্র/রাষ্ট্রসমূহকে ব্যবহার করে সে তার মূল ভিত্তি হিসেবে, অন্যান্য সামাজিক কাঠামোর ওপর রাজনৈতিক কূটকৌশল প্রয়োগ করে (যুদ্ধ, যে রাজনীতির চরমতম রূপ) – একে একে ওগুলোকে পুঁজির অধীনে নেয়ার জন্যে। পাশাপাশি প্রতিযোগিতা চলে, অন্যান্য পুঁজির ওপর দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে কীভাবে বিশ্বকে বিভক্ত করা যায়, তা নিয়ে।

পুঁজিবাদের পূর্বে সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব থাকলেও সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদের একটি নির্দিষ্ট ধাপ। একচেটিয়া পুঁজির (মনোপলি ক্যাপিটাল) আন্তর্জাতিকীকরণের মধ্য দিয়ে উপনিবেশবাদের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠে সাম্রাজ্যবাদ। আরো সহজভাবে বলতে গেলে, সাম্রাজ্যবাদ হলো একটি সমন্বিত বিশ্বব্যবস্থায়, জাতীয় অর্থনীতিসমূহের পুঁজিকৃত (সমষ্টিগত) অবস্থা, যা গুণগতভাবে বর্ধিত উৎপাদনের সামাজীকিকরণের সাথে সংযুক্ত, আর যেখানে সমগ্র পৃথিবীর ভাগবাঁটোয়ারা পুঁজিবাদী শ্রেণীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

বরাবরই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুঁজির মাঝে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দেখা যায়, পাশাপাশি পুঁজির ভিন্ন ভিন্ন ধরন, বিভিন্ন পুঁজিবাদীগোষ্ঠী এবং তাদের স্বতন্ত্র ও সমষ্টিগত স্বার্থের মধ্যেও অসংগতি পরিলক্ষিত হয় (যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে)। সুতরাং বাস্তবতা আরও অনেক জটিল, কিন্তু অতি সাধারণ অর্থে দুধরনের সামাজিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী যুগ বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়েছে যেখানে পুঁজি পুঞ্জীভূত হয় (কেন্দ্র বা কোর) এবং যে সমাজকাঠামোয় উদ্বৃত্তমূল্য (মুনাফা) তৈরি হয় (পরিসর বা পেরিফেরি)। সাম্রাজ্যবাদী সামাজিক কাঠামোতেই ক্ষমতাসীন পুঁজিবাদী শ্রেণীর মূল নিহিত, যা অন্যান্য সমাজকাঠামোর ওপর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ভাবাদর্শিকভাবে পুরোপুরি আধিপত্য বজায় রাখে, একই সময়ে এটি নিজ সামাজিক কাঠামোর মধ্যকার সাধারণ জনতার (বিশেষকরে শ্রমিকশ্রেণীর) ওপরেও শোষণনিপিড়ন চালায়।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন রূপে উন্মোচিত হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের স্বরূপ। বিভিন্ন সময়সীমায় এর প্রকৃতি নিরূপণ করা হয়, ঐ সময়কার মানব সমাজের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে। পুঁজিবাদী যুগে, পুঁজির আধিপত্যের ধরনের ভিত্তিতে সাম্রাজ্যবাদের তিনটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পর্যায় নির্ধারণ করা যায়। এদের প্রতিটি পর্যায় পূর্ববর্তীটিকে সরিয়ে এগিয়েছে কিন্তু কোনোটিই পূর্বের পুঁজিবাদী স্বরূপকে প্রতিস্থাপন করেনি, যা এখনো বহাল তবিয়তেই রয়েছে। এগুলো হলো, মার্কেন্টাইল ক্যাপিটাল বা বণিক পুঁজি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপিটাল বা শিল্প পুঁজি এবং ফিন্যান্স ক্যাপিটাল বা আর্থিক পুঁজি। অধীনস্থ দেশগুলোতে পুঁজির ধরন নির্ধারিত হয় আধিপত্যকারী সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর পুঁজির ধরন অনুযায়ী।

. বণিক পুঁজি (মার্কেন্টাইল ক্যাপিটাল)

এই ধরনের পুঁজি বাণিজ্যের ভেতর দিয়ে উদ্বৃত্তমূল্য তৈরি করে। অসম বাণিজ্য সম্পাদিত হয়, আধিপত্যকারী দেশ থেকে উৎপন্ন পণ্যের অতি উচ্চমূল্য নির্ধারণ (overvaluation) এবং অধীনস্থ দেশগুলোর উৎপন্ন পণ্যের নিম্নমূল্য নির্ধারণের (undervaluation) মাধ্যমে। সাম্রাজ্যবাদী দেশের স্বার্থে এই বাণিজ্য একটি ইতিবাচক ভারসাম্য দাবি করে ( তৈরি পণ্য আমদানির চেয়ে রপ্তানি করা হয় বেশি এবং প্রচুর অর্থ প্রথমদিকে প্রাথমিকভাবে স্বর্ণ ও রৌপ্য হিসেবে রপ্তানি এবং পরে আমদানি করা হয়)। তার মূল কার্যক্রমগুলো হলো প্রাথমিক পুঁজির পুঞ্জিভবন (primary accumulation) (কাঁচামাল আয়ত্তে আনা) এবং বাজার উন্মুক্ত করে দেয়া (প্রয়োজনে জোরপূর্বক)

১৬ শতক থেকে ১৮ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে পশ্চিম ইউরোপে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হয় নগরায়ন ও সমুদ্র পথের অগ্রগতি সাধিত হয় এবং ছোট সামন্তীয় রাজ্যগুলো প্রতিস্থাপিত হয় কেন্দ্রীয় জাতিরাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীরা পরস্পর একে অপরের শক্তি বৃদ্ধি করছিল শুল্ক আরোপের মাধ্যমে রাষ্ট্র সহায়তা করেছিল ব্যবসায়ীদের, আর প্রাপ্ত তহবিলের দ্বারা তারা দুপক্ষই শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। সামরিক বাহিনীর জোরে এবং হুমকির মাধ্যমে দখল ও নিয়ন্ত্রণের দ্বারা তারা এক উপনিবেশ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল।

উপনিবেশগুলো ছিল এমন সামাজিক সংগঠন; যা আধিপত্যকারী দেশগুলোর দ্বারা সরাসরি শাসিত হতো। আজ যদিও উপনিবেশগুলো নয়াউপনিবেশে রূপান্তরিত হয়েছে (স্বাধীন শাসনতন্ত্রের ছদ্মবেশে) – পুঁজির এই ধরন এখনো সহায়ক নীতির পক্ষে প্রকটরূপে সহিংস অথবা হুমকি স্বরূপ যে সহায়ক নীতি বাণিজ্য সুবিধাসমূহ সুনিশ্চিত করে, যেমন ভর্তুকি, শুল্ক ও কোটা এবং শিল্পের বিশেষায়ন ইত্যাদি।

. শিল্প পুঁজি (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপিটাল)

শিল্প পুঁজিবাদের (সামন্ততন্ত্রের সাথে সংঘাতের মধ্য দিয়ে) উত্থানের সাথে সাথেই বিস্তার লাভ করতে শুরু করে পরিণামে তা নিজ দেশে পরিপূর্ণ বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণের পর, রাষ্ট্রীয় সীমানা পেরোতে উদগ্রীব হয়ে ওঠে। পণ্য রপ্তানির চেয়ে পুঁজির নিজের রপ্তানিটাই বেশি জরুরি হয়ে উঠেছিল। উৎপাদন স্থানান্তরিত হয়েছিল ঐসব এলাকায় যেখানে উৎপাদন খরচ অপেক্ষাকৃত সস্তা (বিশেষ করে শ্রম)

তার পরবর্তী পর্যায়ে, রাষ্ট্রগুলো উৎপাদনের বিশ্বায়নের পথে শেষ প্রতিবন্ধকতাটুকুও ভেঙ্গে দেয়ার মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াকে সহায়তা করেছিল মুক্ত বাজার চুক্তির (নাফটার মতো) সাফাই গেয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সাম্যাবস্থা ধরে রাখতে চেয়েছিল। বাস্তবতা হলো, এই আয়োজন (নয়াউদারনৈতিক) সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর সমর্থনে একচেটিয়া পুঁজি গোষ্ঠীগুলোর অনুকূলে ছিল, আর অধীনস্থ সমাজ কাঠামোগুলো থেকে নতুন আরেক দফা উদ্বৃত্তমূল্য খসানোকে সহজতর করেছিল।

অধীনস্থ দেশগুলো ছিল বিশ্ব অর্থনীতির শক্তিশালী হাতিয়ার। যদিও প্রাথমিকভাবে ঐ দেশগুলোতে উন্নত ও শক্তিশালী উৎপাদনের পথ অনুসরণ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে সেখানকার স্থানীয় অর্থনীতির অবস্থা আরো দুর্বল ও বিকৃত হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি এসব দেশকে নির্ভরশীল করে তোলে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য একদেশ অন্যদেশের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িত হয়ে পড়ে। পুঁজির বিনিয়োগ পাওয়ার জন্যে তারা মজুরি কমিয়ে, পরিবেশগত মানদণ্ড দুর্বল করে এবং অভ্যন্তরীণ দমনপীড়ন বৃদ্ধি করে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে বাধ্য হয়। পুঁজিবাদী কাঠামোতে মুক্ত বাজার হলো স্থানীয় জনগণের দৃষ্টির অগোচরে অধিকতর মুনাফা পুঞ্জীভূত করার একটি চক্রান্ত মাত্র, যাতে সেই জনগণের দুর্দশাই শুধুমাত্র বেড়ে চলে।

অধীনস্থ দেশগুলোর জাতীয় অর্থনীতি ধ্বংসের মাধ্যমে সেই রাষ্ট্রগুলোকে ঋণ হিসেবে সহায়তা গ্রহণে বাধ্য করা হয়। এসকল সহযোগিতা প্রস্তাব করা হয় কাঠামোগত সমন্বয়এর আরোপিত শর্তের চেহারায় পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যক্তিমালিকানাধীনকরণ (যা পরবর্তীতে, আন্তর্জাতিক পুঁজি ভোগ করতে পারে), সেই সাথে ঋণের উপর সুদের লেনদেনের সুবাদে সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে আসে কর্তন।

শিল্পায়নের বিশ্বায়ন অনতিক্রম্য সীমায় পৌঁছার সাথে সাথে পুঁজিও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পতিত হয়। তাকে সম্প্রসারণের নতুন উপায় বের করতে বাধ্য করা হয় ব্যক্তিমালিকানাধীনকরণ এবং বৃহত্তর (গ্রহনক্ষত্র এবং চাঁদ) থেকে ক্ষুদ্রতর (ডিএনএ), বস্তুগত (পানি) থেকে ভাবগত (আবেগ) সহ জীবনের সকল ক্ষেত্রকে পণ্যায়িত করছে। যে কোনো মূল্যে হোক, বিনিয়োগ করতে হবে। ধীরে ধীরে পুঁজি গ্রাস করে তার নিজ দেশকে (যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক পুঞ্জীভবন মাউন্টেইনটপ রিমুভাল উচ্ছেদ ও ট্র্যাকিং এর ছদ্মবেশ নেয়) এবং তার জনসমষ্টিকে (উল্লেখ্য, কারাগার ব্যক্তিমালিকানাধীনকরণ করার ফলে বিশ্বজনসংখ্যার ৫ শতাংশ ধারণ করা যুক্তরাষ্ট্রে এখন বিশ্বের ২৫ শতাংশ কয়েদির আবাস)। যা স্থানীয় কাঠামোগত সমন্বয় (দমনপীড়ন সহকারে) এনে দেয়। আর বিদেশে, এই পুঁজি বছরের পর বছর একটানা নিরীহ জনগোষ্ঠীর উপর বোমা বর্ষণ করতে থাকে, শুধুমাত্র এর উচ্ছিষ্ট মূলধন যুদ্ধসরঞ্জামের খাদ্য হিসেবে চিবিয়ে খাবার জন্যে। এমনকি তেজস্ক্রিয়তা বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়মূলক পরিণামেও তা বিন্দুমাত্র দ্বিধাগ্রস্ত হয় না। একে রোধ করা না গেলে, এটি নিজেকে সহ, সবকিছুই ধ্বংস করে দিবে।

. আর্থিক পুঁজি (ফিন্যান্স ক্যাপিটাল)

যেহেতু নতুন সুযোগ হিসেবে শিল্পকারখানায় লাভজনকভাবে বিনিয়োগ শনাক্ত করা আরও কঠিন হয়ে পরেছে, তাই পুঁজিপতিরা আর্থিক প্রবিধান তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল, যাতে করে তারা অন্তত কোথাও তাদের অপ্রতিরুদ্ধ পুঁজি ধাবিত করতে পারে। মুনাফা এখন ক্রমবর্ধমান বস্তু উৎপাদনের প্রকৃত মূল্যের ভিত্তিতে নয়, অথচ জামানত, ফাটকাবাজি আর মধ্যস্থতার মধ্যদিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে কল্পিত (বিষাক্ত) মূল্য।

সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থরক্ষার্থে স্থাপিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (ইউএইড, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ) শিল্পায়নের জন্য ঋণ সরবরাহ থেকে স্থানান্তরিত হয় যা মুনাফা সংগ্রহ ও ফটকাবাজির জন্যে ঋণ সরবরাহের দিকে এগুচ্ছে। ভূমি হলো বর্তমানের জমজমাট পণ্য সাম্প্রতিক বছরেগুলোতে আফ্রিকার সকল কৃষিজমির ৫ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে হয় বিক্রয় করা হয়েছে কিংবা ইজারা দেওয়া হয়েছে, বিশ্ব ব্যাংকের বেশির ভাগ অর্থ এখানে লগ্নি করা আছে। ঋণ প্রবেশ করেছে সমাজের প্রত্যেকটি পর্যায়ে, ব্যক্তি থেকে শুরু করে ছোটবড় সকল আকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকার পর্যন্ত (সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো নিজেরা সহ)। আধিপত্যের একটি হাতিয়ার হিসেবে ঋণ অনেক স্থানেই আক্রমণ চালিয়েছিল। সারা বিশ্ব ক্রীতদাস হয়ে ভবিষ্যৎ শ্রমের কল্পিত ফলএর সুদ স্বরূপ পরিশোধ করে চলছে, সে ফল আদতেই পাঁকবে কী’না সন্দেহ!

বাণিজ্যিকপণ্য, স্টক, বন্ড, সিকিউরিটি ইত্যাদির বৈদেশিক বাণিজ্য এখন আন্তর্জাতিকীকরণের আওতাভুক্ত। এই সকল ফাটকাবাজির বাজারগুলোর চরম অনিশ্চয়তা, বড় রকমের বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিরতার জন্য দায়ী ভঙ্গুর, অসঙ্গত আর্থিক চক্র (financial bubbles) – মানুষের জন্য আরও বেশি দুদর্শার কারণ হয়ে ওঠে। এর কারণে আরো তীব্র হয় বিভিন্ন পুঁজিবাদী শ্রেণীর মধ্যকার সংঘাত; যার উপর নির্ভর করে তারা বিভিন্ন ভয়াবহ কর্মের (একাধিক যুদ্ধ বিস্তৃতি? পরিবেশগত অবক্ষয়? গণহত্যা? নাকি সবগুলোই?) সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন কাঠামোগত সংকটের মধ্যদিয়ে ধুঁকে ধুঁকে এগোবার জন্যে উচ্ছেদকৃত ও জনশূন্য মাঠ পুনর্গঠনের মতো নিষ্ফল আশা তাদের।

এর ফলে সৃষ্টি হয় অধীনস্থ পরাধীন শ্রেণীর যারা সহনশীলতার শেষ সীমায় পৌঁছে শাসনব্যবস্থার তৈরি এই নরক থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খোঁজে। তখন প্রতিরোধ চক্রের বুদবুদ সমাজের প্রতিটি কোণে উঠে আসে, প্রতিষ্ঠানগুলো সংযুক্ত হতে শুরু করে আর এই সময় সংগ্রামের অস্তিত্বের দীর্ঘজীবীতার স্বার্থে একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলন পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে সক্ষম।

আমাদের মধ্যে যারা যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছেন বিশ্বের সবচেয়ে সহিংস ও ধ্বংসাত্মক পরাশক্তি তাদের অবশ্যই সব ধরনের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া উচিত এবং এমন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যেগুলো পারস্পরিক সংহতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তির আন্দোলনে সাহায্যসহযোগিতা ও কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সহায়তা করবে। আমাদের অবশ্যই নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে পুঁজিবাদীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনার জন্যে; যারা বিশ্ব জুড়ে আধিপত্য করছে মাত্র গুটিকয়েকের ব্যক্তিস্বার্থে।।

———————————-

অনুবাদ : আরিফ ইসলাম

সম্পাদনা : শাহেরীন আরাফাত

স্টেফানি ম্যাকমিলান :: রাজনৈতিক কর্মী, কার্টুনিস্ট (যুক্তরাষ্ট্র)।